নিচে পোস্টটি মোঃ আলীর, আমি সুস্থ ও তথ্যসম্পন্ন বিতর্কের জন্য শেয়ার করলাম, যেসব বন্ধুরা ইতিহাসে সম্যক জ্ঞান রাখেন, মন্তব্য করে সত্য অসত্য উদ্ঘাটনের জন্য অনুরোধ জানালাম।
Gautam Roy ও Susnata Das আপনাদের পক্ষে সম্ভব হলে পোস্টের তথ্য ঠিক কতটা সত্য, প্লিজ একটু আমাদের জানান।
আওরঙ্গজেব নিয়ে আমার আগের পোস্টে যে সমস্ত পাঠক সন্তুষ্ট হতে পারে নি এটি তাদের জন্য
হিন্দু মন্দির ও ঔরঙ্গজেবের আদেশনামা:-
“The Fermans of Aurangjeb on Hindu Temple”.
মূল রচনা ঃ বিশ্বম্বর নাথ পাণ্ডে (ওড়িশার প্রাক্তন রাজ্যপাল)
বাংলা অনুবাদ ঃ সুধীর রঞ্জন হালদার
আমি যখন এলাহাবাদ নগর সম্পর্কে। মহন্তের মৃত্যুর পরে সম্পত্তির উপর দুইজন দাবিদার মোকদ্দমা করেছিলেন। এই কাগজপত্র ঔরঙ্গজেবের আদেশনামা ছিল। এর দ্বারা ঔরঙ্গজেব মন্দিরকে নগদ অর্থরাশির সঙ্গে ভূমি দান করেছিলেন। আমার মনে সন্দেহ দেখা দেয়। আমি উক্ত আদেশটিকে নকল বলে ভেবে বসি। আমি আশ্চর্যান্বিত হই এই ভেবে যে, যে ঔরঙ্গজেব মন্দির ভাঙার জন্য বিখ্যাত ছিলেন, তিনি কী করে মন্দিরকে এই জায়গির (ভূমি) দান করেছিলেন এবং দেবতার পূজা-অর্চনা ও ভোগ দেবার জন্য এই জায়গির দেওয়া হয়েছে বলে কীভাবে বলেছিলেন? ঔরঙ্গজেব ‘মূর্তিপূজা’র সঙ্গে কীভাবে নিজেকে মেলালেন?
আমি ভাবলাম, এই কাগজপত্র ঠিক নয়। কিন্তু এই নিশ্চয়তায় পৌঁছাবার পূর্বে আমি ভাবলাম, ডাঃ তেগবাহাদুর সপ্রুর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা-পরামর্শ করা উচিত হবে, যেহেতু তিনি একজন পার্সিয়ান এবং আরবি ভাষার বিদ্বান রূপে প্রসিদ্ধ ছিলেন! আমি সেই কাগজগুলি তাঁর সামনে রেখে তাঁর মতামত চাইলাম। কাগজগুলি ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তিনি বললেন, এই কাগজপত্র সম্পূর্ণ ঠিক আছে এবং তা ঔরঙ্গজেব দ্বারা ঘোষিত আদেশই বটে। তারপরে তিনি নিজের মুন্সীকে বারানসীর জঙ্গমবাড়ির শিবমন্দিরের দলিলপত্র আনার জন্য বললেন, যার সম্বন্ধে অনেক মোকদ্দমা মাননীয় এলাহাবাদ উচ্চ ন্যায়ালয়ে গত পনেরো বছর ধরে চলছে। জঙ্গমবাড়ির শিবমন্দিরের মহন্তের কাছেও বাদশাহ ঔরঙ্গজেবের ঘোষিত অনেক আদেশপত্র ছিল, যাতে মন্দিরকে জায়গির দেওয়ার কথা উল্লেখ করা আছে।
ঔরঙ্গজেবের এই নতুন রূপ আমার কাছে উদ্ঘাটিত হয়। আমি আশ্চর্যান্বিত হয়ে যাই। ডাঃ সপ্রুর পরামর্শে আমি ভারতের অনেক মন্দিরের মহন্তদের পত্র লিখলাম এবং তাঁদেরকে অনুরোধ করলাম যে, যদি তাঁদের কাছে মন্দিরের জন্য ‘জায়গির’ দেওয়া সম্বন্ধে ঔরঙ্গজেবের আদেশনামা থাকে, তবে তার প্রত্যেকটির নকল আমাকে পাঠান। এটা আমার জন্য আর একটি আশ্চর্যজনক বিষয় ছিল। আমার কাছে বড়ো বড়ো মন্দির, যেমন- মহাবালেশ্বর, উজ্জৈন, বালাজী, চিত্রকূট, উমানন্দ মন্দির, গৌহাটি ও জৈন-মন্দির ‘শত্রুঞ্জয়’ এবং এর সঙ্গে অন্যান্য মন্দির ও গুরুদ্বার- যেগুলি উত্তর ভারতে স্থাপিত ছিল, সেগুলির মহন্তদের দ্বারা ঔরঙ্গজেবের আদেশনামার নকলগুলি পাঠালেন। এই আদেশ নামা ১০৬৮ A. H. (১৬৫৯) থেকে ১০৯১ A. H. (১৬৮৫)র মধ্যে জারি হয়েছিল। (A. H.-এর অর্থ After Hijri)
হিন্দু এবং তাদের মন্দিরগুলির প্রতি ঔরঙ্গজেবের উদার বিচারের এগুলি কেবল কিছু উদাহরণ মাত্র, কিন্তু এসব এখানে প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট যে, ঐতিহাসিকেরা ঔরঙ্গজেবের বিষয়ে যা কিছু লিখেছেন, সেসব ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী ও কেবল মুদ্রার একটি দিক দেখাবার সমান। ভারত একটি বিরাট দেশ, যার বুকে হাজার হাজার মন্দির স্থাপিত হয়েছে। যদি সঠিক ভাবে ইতিহাসকে আবিষ্কার করা যায়, তবে আমার বিশ্বাস যে, আরো অনেক উদাহরণ নজরে আসবে, যার দ্বারা জানা যাবে যে, ঔরঙ্গজেব অমুসলমানদের প্রতি কতো উদার ছিলেন।
ঔরঙ্গজেবের আদেশনামাগুলির অন্বেষণের সময় শ্রী জ্ঞানচন্দ্র ও ডঃ পি.এল. গুপ্তা, পাটনা সংগ্রহশালার প্রাক্তন কিউরেটর-এর সঙ্গে আমার সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। তিনিও ঔরঙ্গজেবের সম্বন্ধে অতি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক সংস্কারে লেগেছিলেন। এটা জেনে আমি অত্যন্ত খুশি হলাম যে, এমন অনেক শোধনকারীও আছেন, যাঁরা ঔরঙ্গজেবের ছবির উপরে পড়া বদনামের ধূলিকণা সাফ করার কাজে এবং সত্যের অনুসন্ধানে লেগেছেন। এই বাদশাহকে মানসিক বিকারগ্রস্ত ঐতিহাসিকগণ মুসলমান শাসকের প্রতীক রূপে চিত্রিত করেছেন। এই কারণে দুঃখিত হয়ে একজন কবি বলেছেন-
“হজারোঁ সাল মেঁ বস য়াদ উনকি দাস্তাঁ ইতনি,
কি আলমগীর হিন্দুকুশ থা, জালিম থা, সিতম্গর থা।”
অর্থাৎ হাজার হাজার বছরের মুসলিম শাসনে তাদের কেবল এটাই মনে আছে যে, আলমগীর ঔরঙ্গজেব হিন্দুদের হত্যাকারী, অত্যাচারী ও নির্দয় বাদশাহ ছিলেন।
“বনারস আদেশনামা” নামে প্রসিদ্ধ আদেশনামার কারণে ঔরঙ্গজেবকে একজন হিন্দুবিরোধী বাদশাহ রূপে বদনাম করা হয়েছে। এই আদেশনামাটি বনারসের একটি ব্রাহ্মণ পরিবারের কাছে আছে, যারা গৌরী মহল্লার বাসিন্দা। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে কোনো এক মঙ্গল পাণ্ডে দ্বারা উক্ত আদেশনামাটি সিটি ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে উপস্থাপিত করা হয়েছিল। সে গোপী উপাধ্যায়ের মেয়ের পুত্র। সেদিকে শিক্ষিত লোকদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয় এবং প্রথমবার বাংলার এসিয়াটিক সোসাইটি পত্রিকায় তা প্রকাশিত হয়। সেইদিন থেকে এই আদেশনামার গুরুত্ব না বুঝে ঐতিহাসিকগণ এটাকে উদ্ধৃত করতে থাকেন যে, ঔরঙ্গজেব হিন্দুমন্দিরগুলির নির্মাণ কাজ বন্ধ করিয়েছিলেন।
ঔরঙ্গজেব ১৫ জামাদিল, ১০৬৫ A. H. (১০ মার্চ, ১৬৫৯)-তে বনারসের স্থানীয় পদাধিকারীকে এই আদেশনামা হস্তান্তরিত করেছিলেন, যা কোনো ব্রাহ্মণের দেওয়া আবেদনপত্রের নিষ্পত্তির ফলস্বরূপ জারি হয়েছিল। সেই ব্রাহ্মণ একটি মন্দিরের হর্তাকর্তা ছিলেন এবং তাঁকে কিছু স্থানীয় লোকে হয়রান করছিল। আদেশনামাটি নিম্নপ্রকারের ছিল-
“আবদল হাসানকে--- যে শাহী উদারতা ও কৃপাদৃষ্টি প্রাপ্ত হয়েছে, ইহা জানিয়ে দেওয়া যাচ্ছে যে, আমাদের সহজ পরোপকারিতা ও স্বাভাবিক দয়াপূর্ণ ব্যবস্থার কারণে ছোটো হোক বা বড়ো হোক, সমস্ত বর্গের লোকদের কল্যাণের জন্য আমাদের সম্পূর্ণ শক্তি কাজ করছে, আমরা চাইছি যে, সমস্ত লোক শান্তি-শৃঙ্খলার সঙ্গে বাস করে। আমাদের পবিত্র আইনের বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, সমস্ত পুরোনো মন্দিরগুলিকে অবক্ষয় থেকে রক্ষা করা হোক, কিন্তু নতুন মন্দির নির্মাণ না করা হোক।
“আমাদের এই ন্যায় থাকা সত্ত্বেও আমাদের পবিত্র ন্যায়ালয় থেকে একটি বিষয় অবগত করা যাচ্ছে যে, বনারস শহর এবং তার আশপাশের অঞ্চলের হিন্দুদের কিছু লোক হয়রান করছেন ও তাঁদের প্রত্যেক কাজে প্রতিবন্ধক হচ্ছেন; তাঁদেরকে হয়রান করার সঙ্গে সঙ্গে ব্রাহ্মণদেরকে নিজেদের পরম্পরাগত পদগুলি থেকেও বেদখল করতে চাইছেন। এইভাবে ধমক-চমক দেবার জন্য হিন্দুসমাজ ভীতসন্ত্রস্ত হয়েছেন।
“এইজন্য মাবদৌলত (ঔরঙ্গজেব) এই আদেশ দিচ্ছেন যে, এই আদেশ পেয়ে তৎক্ষণাৎ, আপনি সকলকে অবগত করে দিন যে, এখন থেকে আগামী দিনগুলিতে কোনো প্রকার বেআইনি ভাবে কোনো ব্রাহ্মণকে বা কোনো হিন্দুর কাজে বাধা দিবেন না অথবা তাঁদের কেউ হয়রান করবেন না; তাঁরা যেন আগের মতো নিজেদের বৃত্তি করতে পারেন ও শান্তি-শৃঙ্খলার সঙ্গে থেকে আল্লা-তাল্লার কাছ থেকে আমাদের পাওয়া সলতনত (শাসন) সদাসর্বদা ভালো থাকুক, এইজন্য প্রার্থনা করতে পারেন। এই আদেশনামা দ্রুত কার্যকরী করা হোক।”
এই আদেশনামা থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ঔরঙ্গজেব কোনো নতুন মন্দির নির্মাণ সম্পর্কে কোনো নতুন আদেশ জারি করেননি। তিনি কেবল প্রচলিত হয়ে আসা নিয়ম সম্পর্কে অলোচনা করেছিলেন এবং সে সময় মন্দিরগুলিকে ভাঙার পরিবর্তে সুরক্ষা দেবার জন্য নিজেদের বচনবদ্ধতার কথা বারংবার বলেছিলেন। তিনি স্পষ্টরূপে মন্দিরগুলির বিনষ্ট করার বিরুদ্ধে ছিলেন। আদেশনামাটি আরো স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, তিনি নিজের হিন্দু প্রজাদেরকে শান্তি-শৃঙ্খলার সঙ্গে জীবন যাপন করার জন্য সচেষ্ট ও যত্নবান ছিলেন।
এই রকমের কেবল একটি মাত্র আদেশনামাই ছিল না। বনারসে আর একটি আদেশনামা রয়েছে, যা থেকে জানা গেছে, ঔরঙ্গজেব প্রকৃতপক্ষে এটাই চেয়েছিলেন যে, হিন্দুরা শান্তিতে জীবন যাপন করুন। তা নিম্নরূপ-
“এই পবিত্র ও সু-অবকাশ সময়ে এই আদেশনামাটি জারি করা হলো যে, মহারাজাধিরাজ রাজারাম সিংহের দ্বারা, পবিত্র আল্লা আদালত সমক্ষে একটি দরখাস্ত দেওয়া হলো যে, তাঁর পিতা বনারসের গঙ্গাতীরে মাধোরাম মহল্লায় ভাগবত গোঁসাই- যিনি তাঁর গুরু ছিলেন, তাঁর থাকার জন্য একটি বড়ো মহল তৈরি করেছিলেন এবং যেহেতু কিছু লোক উক্ত গোঁসাইকে হয়রান করছে, এইজন্য আমাদের শাহী আদেশ হচ্ছে যে, এই নির্দেশ কার্যকরী হবার সঙ্গে বর্তমান ও আগামী দিনগুলিতে সমস্ত পদাধিকারীদেরকে অবগত করান যে, কোনো ব্যক্তি গোঁসাইজীর সঙ্গে বা তাঁর কোনো কাজে বাধা সৃষ্টি না করেন বা তাঁকে হয়রান না করেন; তবে তিনি শান্তিতে থেকে পরমারদিগার (ঈশ্বর)-এর থেকে পাওয়া এই সলতনৎ (শাসন) সদাসর্বদা ভালো থাকার জন্য খোদার কাছে প্রার্থনা করতে পারবেন। একে কড়াকড়ি ভাবে পালন করা হোক বতারিখ ১৭ রবি A. H. ১০৯১ A. H. ।”
জঙ্গমবাড়ির মঠের মহন্তের কাছে এমন কিছু আদেশনামা রয়েছে, যার দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, ঔরঙ্গজেব কখনো হিন্দু বা মুসলমান প্রজাদের অধিকারের উপরে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করেননি। তিনি অপরাধীদের সঙ্গে খুব কঠিন ব্যবহার করতেন। সেই আদেশগুলির একটি আদেশ, ঔরঙ্গজেবের আদালতে জঙ্গমপন্থী (শৈবমতের একটি শাখা) অনুগামীদের দ্বারা একজন মুসলমান নাজির বেগের বিরুদ্ধে দেওয়া দরখাস্তের উপরে বিচার করার পরে জারি হয়েছিল এবং তার উপরে শাসনাদেশ নিম্নপ্রকার ছিল-
“হাবেলি মহম্মদাবাদ, বনারস সুবা (রাজ্য) এলাহাবাদ নামে প্রসিদ্ধ, এখানকার পদাধিকারীকে অবগত করা যাচ্ছে যে, সেখানকার অর্জুনমল ও জঙ্গমেরা, যাঁরা পরগণা বনারসের নিবাসী- তাঁরা এসে বাদশাহকে অভিযোগ করেছেন যে, নাজির বেগ, যিনি বনারস নিবাসী- তিনি পাঁচটি হাবেলি (ভবন) জবরদখল করে নিজের অধিকারে নিয়ে গিয়েছেন। এই ভবনগুলি কাশীবনারসে অবস্থিত। এইজন্য আদেশ দেওয়া যাচ্ছে যে, যদি এই অভিযোগটি সত্য বলে প্রমাণিত হয়, তবে নাজির বেগকে সেই হাবেলিগুলি দেওয়া না যাক, যেহেতু আগামী দিনগুলিতে কখনও ‘জঙ্গম’ অভিযোগ নিয়ে আমাদের এখানে যাতে কেউ না আসেন।”
আদেশনামার তারিখ ১১ শাবন, সন ১৩ জুলুস (১৬৭২ খ্রিস্টাব্দ)।
১ রবি-অল-আউয়ল ১০৭৮ A. H. এ জারি দ্বিতীয় আদেশনামা জঙ্গমদের কাছ থেকে জবরদখল জমিকে ফেরত দেওয়া সম্বন্ধে, তা নিম্নরূপ ছিল-
“হাবেলি বনারস পরগণা সুবা (রাজ্য) এলাহাবাদের সমস্ত আজ ও আগামী দিনগুলির জায়গিরদারদেরকে ও কোষাধ্যক্ষকে অবগতকরা হলো যে, বাদশাহের আদেশ তারিখ ৯ অমরদাদ ইলাহির দ্বারা ১৭৮ বিঘা জমি ‘জঙ্গম’-এর ভরণপোষণের জন্য দেওয়া হয়েছিল। এর পূর্বে অনুভবি পদাধিকারীও অনুসন্ধান দ্বারা ঠিক থাকার কথা জানতে পেরেছেন। এবারেও পরগণার মালিকের মোহর সহ সাক্ষী, কাগজপত্র দাখিল করেছেন। আগের মতো এবারেও সেই জমি তার দখলে আছে ও সেই জমির উপর প্রকৃত অধিকার প্রমাণিত হয়েছে। এইজন্য বাদশাহের আদেশ অনুসারে সেই জমি তার জন্য ছেড়ে দেওয়া গেল। খরিফ ফসলের দশ তারিখের আগে সেই জমিকে তার হস্তগত করে দেওয়া হোক এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে তার উপরে কোনো প্রকার জোরজবরদস্তি করা না হোক, যেহেতু ‘জঙ্গম’ নিজের ভরণপোষণের জন্য এর ব্যবহার করতে পারবে। একে পালন করতে যাতে কোনো ভুল না হয় এবং কেউই এর বিরোধী কাজ না করেন।”
এই আদেশনামাটি স্পষ্ট প্রমাণ করছে যে, ন্যায় কেবল তাঁর রক্তেই ছিল না, বরং এটাও প্রমাণ করছে যে, তিনি দান করার ক্ষেত্রে কোনো প্রকারের ভেদভাব করেননি। সম্ভবত উক্ত একশত আটাত্তর বিঘা জমি স্বয়ং ঔরঙ্গজেবের দ্বারা জঙ্গমকে দানস্বরূপ দেওয়া হয়েছিল, যেহেতু উক্ত জমির জন্য আরো একটি আদেশ বতারিখ ৫ রমজান, ১০৭১ A. H. আছে, এটি স্পষ্ট করছে।
“সুবা (রাজ্য) এলাবাদের মাতহদ পরগণা হাবেলি বনারসের সমস্ত আজ ও আগামী দিনের আধিকারিকদের জ্ঞাত করিয়ে দেওয়া যাচ্ছে যে, বাদশাহের নির্দেশ অনুসারে ১৭৮ বিঘা জমি ‘জঙ্গম’কে ভরণপোষণের জন্য দেওয়া হয়েছে। এবার পুনরায় বাদশাহের দরবারে হাজির হয়েছে। তার অধিকার প্রমাণিত হয়েছে এবং সে বেঁচে আছে ও জমি তার দখলে আছে। এইজন্য সে জমি এখন থেকে দান করা জমি বলে ঘোষণা করা যাচ্ছে, যেহেতু সে উক্ত জমির ব্যবহার করতে পারবে এবং বাদশাহের শাসন সদাসর্বদা বলবত থাকার জন্য সে আশীর্বাদ করুক।”
বনারস শহরে অন্য একটি জমি একজন হিন্দু ধার্মিক উপদেশককে ঔরঙ্গজেবের দ্বারা ১০৯৮ A. H.-এ দেওয়া হয়েছিল। তাহা নিম্ন প্রকার-
“এই পবিত্র বেলায় এই আদেশ জারি করা গেল যে, জমির দুই ভাগ, ‘রকবা ৫৮৮ দীরা’ যাহা বনারসের গঙ্গা নদীর কূলে বেণীমাধব ঘাটে অবস্থিত আছে। (একটি ভাগ রামজীবন গোঁসাইয়ের ঘরের সামনে এবং বড়ো মসজিদের পিছনে, দ্বিতীয় ভাগ অল্প উপরে কোনো ঘর না থেকে খালি পড়ে আছে এবং সেটি সর্বসাধারণ) এইখানে আমরা উক্ত জমি রামজীবন গোঁসাই এবং তার পুত্রকে পুরস্কার স্বরূপ দিতে মঞ্জুর করেছি। সে সেখানে ঘর করার পরে পবিত্র সাধু-সন্ত, ফকির ও ব্রাহ্মণগণ সেখানে থাকতে পারবেন এবং আল্লা-তাল্লার দ্বারা আমাদের পাওয়া আমাদের রাজ্যকে সদাসর্বদা ভালো থাকার জন্য আশীর্বাদ করতে পারবেন। এইজন্য আমাদের প্রজা, সন্তান, মন্ত্রী, পদাধিকারী, সিপাহি, আজ ও আগামী দিনের তত্ত্বাবধায়কদের উপরে দায়িত্ব থাকলো যে, তারা এই আদেশটিকে সদাসর্বদা পালন করবেন এবং উপরোক্ত ব্যক্তি ও তার বংশধরগণের দখলে এই দুই ভাগ জমি থাকার ব্যবস্থা করবেন এবং এইজন্য কোনো প্রকার মাশুল আদায় করা না যায় এবং তাদেরকে প্রত্যেক বছর বারংবার কোনো প্রমাণপত্র দেবার আবশ্যক হবে না।”
(চলবে)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন